রাউজানের গহিরা থেকে: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির রায় চূড়ান্ত হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর নিজগ্রাম রাউজানের গহিরায় লাশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বংশের লোকজন।
বৃহস্পতিবার সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে ‘ফাঁসির রশিতে ঝুলানো সময়ের ব্যাপার’ মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক ধরে হালদা নদী পেরোলে রাউজানের গহিরা গ্রামটি যেকেউ দেখিয়ে দেবে। প্রধান সড়কের ডান (দক্ষিণ) পাশে গহিরা কলেজ ও উচ্চবিদ্যালয়ের পাশঘেঁষে এক কিলোমিটার এগোলেই ‘১১৬ পরিবার’র বসবাস। যেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে সবচেয়ে সুরম্য প্রসাদটি ‘বাইতুল বিলাল’। যা সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি, তার ভাইয়েরাও গ্রামে এলে বাড়িটিতে থাকেন।
রাত আটটা, ওই বাড়িতে মাত্র দুটি বাতি জ্বলছিল। চারদিকে সুনশান নীরবতা। যেন কবরের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন চলাফেরা করলেও আচার-আচরণে স্বাভাবিকতা ছিল না। কেমন যেন অজানা ভয়, উদ্বেগ তাদের তাড়া করে ফিরছে।
কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী আবুল হাসনাতের সঙ্গে। তিনি অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমাদের একই বংশের লোক। এখন সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে। বিচার নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। এখন লাশের জন্য অপেক্ষা করছি।’
স্থানীয় স্কুলের দপ্তরি আজাদ বয়সে এখনো তরুণ। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে দেখেছি ফাঁসির রায় হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখাও করেছেন। তাই এক্সট্রা কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এখন ফাঁসি কার্যকর হলে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। তবে কবর কোন জায়গায় দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবে উনার পরিবারের সদস্যরাই।’
বৃদ্ধ মনির যাচ্ছিলেন মূল সড়কের পাশের বাজারে। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর কিছুই করার নেই।’
হাতের কাছেই পারিবারিক কবরস্থান। একটি রাস্তা দুভাগ করে দিয়েছে কবরস্থানটি। এক পাশের কবরস্থানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা, মা, দাদা, দাদির কবর। আরেক পাশের কবরস্থানে তার ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী তাজা কবর। স্থানীয়রা বলছেন, মুরুব্বিদের কবরস্থানে নতুন করে কবর দেওয়ার মতো জায়গা নেই। তাই ভাইয়ের কবরের পাশেই ঠিকানা হতে পারে তার।
দেশের দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাত আটটা ৪৫ মিনিটে রায় দু’টির কপি পৌঁছে কারাফটকে। এর আগে আটটা ৩৬ মিনিটে রায় দু’টির কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে রওনা হন ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ অঅইন গবেষণা কর্মকর্তা কাইয়ুম ফয়সাল, ডেসপাস রাইডার সিরাজুল ইসলাম, লাইব্রেরিয়ান তাপস চন্দ ও অফিস সহকারী আবু মুসা। কারাগারে পৌঁছানোর পর তা শোনানো হবে মুজাহিদ ও সাকাকে।
সন্ধ্যা সাতটা ২৪ মিনিটে রায় দু’টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে যায় পৌঁছে বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনালে। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তিনজন পৌঁছে দেন।
এর আগে রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি স্বাক্ষর দেওয়া শেষ করলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিটে সাকা চৌধুরী ও ছয়টা ৩৫ মিনিটে মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের রায় প্রকাশিত হয়। সাকার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় ১৩ পৃষ্ঠার ও মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় ২৯ পৃষ্ঠার।